প্রায় ১৩শ’ বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে পরিচিত কুমিল্লার শালবন বিহার। বিহারের কাছাকাছি এলাকা লালমাই পাহাড়ে মাটির নিচে আরও একটি প্রাচীন স্থাপনার সন্ধান পাওয়া গেছে। এটির নাম বালাগাজীর মুড়া। ইতোমধ্যে নিদর্শনটি দৃশ্যমান করতে খনন কাজ শুরু করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
নতুন করে সন্ধান পাওয়া প্রাচীন এই স্থাপনা একনজর দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে কুমিল্লার সদর দক্ষিণের ধর্মপুরের চারাবাড়ি এলাকায় উৎসুক জনতা ভিড় জমাচ্ছেন। স্থানটি খনন করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা গেলে প্রত্ন পর্যটনে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সদর দক্ষিণ উপজেলার রতনপুর বাজার। বাজার থেকে একটু দক্ষিণে হাতের বাম পাশে ধর্মপুর। শালবন বিহার থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। চারাবাড়ি টিলার ওপর প্রত্ন স্থাপনায় কাজ করছেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বড় বড় ইট দিয়ে তৈরি প্রায় ছয় ফুট চওড়া প্রাচীন একটি দেয়ালের অংশবিশেষ উন্মোচিত হয়েছে। এটা সন্ধান পাওয়া স্থাপনার একটি কর্নার। খননকালে মাটির পাত্রের টুকরো তিন চার ফুট পুরু একাধিক মাটির স্তর সরানোর পরে সন্ধান মেলে এ ধ্বংসাবশেষের। বালাগাজীর মুড়া নামে পরিচিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটিতে উন্মোচিত প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ শালবন বিহার, আনন্দ বিহার, ভোজ বিহার, ইটাখোলা ও রূপবান মুড়ার সমসাময়িক হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজে জড়িত এবং অনুসন্ধান টিম।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বালাগাজীর মুড়া স্থানীয়দের কাছে চারাবাড়ি নামে সুপরিচিত। মূলত এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটির উপরিভাগে প্রচুর চারা তথা মাটির পাত্রের ভাঙ্গা টুকরো থাকায় স্থানীয়ভাবে এই নামকরণ করা হয়। খনন শুরুর পর তা দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় জমাচ্ছেন। এটি খননের পর প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করলে প্রত্ন পর্যটনে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে।
কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবির জানান, প্রাথমিকভাবে বলা যায় এটি সপ্তম শতাব্দীর পরবর্তী সময়ের কোনো স্থাপনা। ধর্মপুর এলাকার আশপাশে রাজ পরিবার ও জমিদারদের বসবাস করতো। ধর্মপুরের এই প্রত্নস্থান ইতিহাসের জন্য নতুন দিগন্ত হতে পারে। এখন পর্যন্ত শালবন বিহারই অঞ্চলটির সবচেয়ে পুরোনো স্থাপনা। শালবন বিহার যেই পাহাড়ি এলাকায়, ঠিক একই পাহাড়ের মধ্যে উন্মোচিত হতে যাওয়া এই প্রত্নস্থানের অবস্থান। শালবন বিহারের যে ইট, সেটির সঙ্গে এই প্রত্নস্থানে পাওয়া ইটেরও বেশ মিল দেখা যাচ্ছে। অনুমান করা যায়, এই স্থাপনা সপ্তম শতাব্দী পরবর্তী সময়ের।
ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. শাহীন আলম জানান, বালাগাজীর মুড়ায় খনন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণ খনন ও গবেষণা কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ধারণা করে এ বিষয়ে এখনো কিছুই বলা যাচ্ছে না।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা জানান, ‘প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বিবেচনা করে আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে বালাগাজীর মুড়াকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ঘোষণা করা হয়। যা ১৯৪৫ সালের শিমলা গেজেটে প্রকাশ করা হয়। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাবিনা আলম মহোদয়ের নির্দেশনায় এ বছর বালাগাজীর মুড়ায় খনন ও অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।’
খনন ও অনুসন্ধান কাজের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ফিল্ড অফিসার) মো. আবু সাইদ ইনাম তানভীরুল বলেন, এপ্রিলের প্রথম দিক থেকে বালাগাজীর মুড়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়। চলবে আগামী জুন মাস পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক দপ্তর, কুমিল্লার একটি প্রত্নতাত্ত্বিক টিম কুমিল্লা জেলার এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে খনন ও অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করছে। আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সাত সদস্যের খনন টিমে আরও আছেন ফিল্ড অফিসার মো. আবু সাইদ ইনাম তানভীরুল, ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. শাহীন আলম, গবেষণা সহকারী মো. ওমর ফারুক, সার্ভেয়ার চাইথোয়াই মার্মা, ফটোগ্রাফার শঙ্খনীল দাশ এবং রেকর্ডার রিপন মিয়া।