অনলাইন ডেস্ক: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে নজিরবিহীন হামলার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। ওই হামলায় ১২শ’র বেশি ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫০ জনকে গাজায় জিম্মি করার জবাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় যে পাল্টা সামরিক অভিযান শুরু করে, তা এখন ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, টানা প্রায় সাড়ে ১৯ মাস ধরে চলা এই সংঘাতে ৫৩ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের সিংহভাগই নারী ও শিশু।
প্রতিবেদনটি বিশেষভাবে শিশুদের ওপর এই সংঘাতের মর্মান্তিক প্রভাব তুলে ধরেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১৬ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে এক বছরের কম বয়সি ৯১৬ জন, এক থেকে পাঁচ বছর বয়সি ৪ হাজার ৩৬৫ জন, ছয় থেকে বারো বছর বয়সি ৬ হাজার ১০১ জন এবং তেরো থেকে সতেরো বছর বয়সি ৫ হাজার ১২৪ জন শিশু রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কেবল বৃহস্পতিবার ভোরেই ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এদিকে, সংঘাতের আঁচ গাজা ছাড়িয়ে পশ্চিম তীরেও ছড়িয়ে পড়ছে। বুধবার পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরের প্রবেশমুখে ইসরায়েলি বাহিনী একটি বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। ৩৫ জন রাষ্ট্রদূত, কনসাল ও কূটনীতিকদের দলটি অবরুদ্ধ শিবির পরিদর্শনের কাছাকাছি পৌঁছালে এই ঘটনা ঘটে, যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হচ্ছে।
কূটনীতিকদের ওপর এই হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কলাস ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন। ইতালি সরকার এ ঘটনায় কৈফিয়ত তলব করে সেদেশে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছে। এছাড়া ফ্রান্স, কানাডা, জর্ডান ও তুরস্কও এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছে। যদিও ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের সেনারা কূটনীতিকদের সর্তক করতে ফাঁকা গুলি ছুড়েছিল।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, চলমান সামরিক অভিযান শেষে গাজা ভূখণ্ড সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
বুধবার (২১ মে) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি যুদ্ধবিরতির জন্য হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, গাজা থেকে সংগঠনটির সকল নেতার বহিষ্কার এবং গাজা নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মতো কয়েকটি শর্ত আরোপ করেন। তার এই ঘোষণায় সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশা আরও ক্ষীণ হয়ে পড়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।