নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার সূচনা করা হয়েছে। একজন নেতা ও একটি দল দেশ পরিচালনা করবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু হয়েছে। শাসকগোষ্ঠী দেশটাকে তাদের পারিবারিক সম্পত্তি মনে করে। এজন্য আওয়ামী লীগ, ভাবাদর্শ, জড়িত ব্যক্তিবর্গ অথবা স্বার্থের জন্য যাদের নেয়া প্রয়োজন তাদের একত্রিত করে একটি শ্রেণি তৈরী করা হয়েছে। তারা সাধারণ মানুষের চেয়ে অধিকতর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সমর্থক সরকারের কর্মচারী, বুদ্ধিজীবী সহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বাছাই করে নেয়া হয়েছে। তারা সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীর মত আচরণ করছে। বৈষম্যের কারণে সাধারণ মানুষ সমান সুযোগ পাচ্ছে না। বৈষম্যের বিরুদ্ধে বাঙালী জাতি দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করছে। বৃটিশরা জমিদার শ্রেনী তৈরী করে ডিভাইড এন্ড রুল এর মাধ্যমে একটি সম্ভান্ত্র শ্রেণি তৈরী করতো। যারা উপনিবেশিক শাসন ও শোষণের পক্ষে কাজ করতো। এই বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতেই পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিলো। পাকিস্তান আমলে সামরিক শাসকরা আঞ্চলিক ভিত্তিতে বৈষম্য সৃষ্টি করেছিলো। তারা বাঙালীদের বৈষম্যের শিকার করেছে। হিন্দুদের সাথে আরো বেশি বৈষম্য সৃষ্টি করেছিলো পাকিস্তানীরা। এমন বাস্তবতায় বাঙালী জাতি স্বায়ত্বশাসন চেয়েছিলো। এক পর্যায়ে আমাদের বাধ্য হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিতে হয়েছিলো। স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা বিজয়ী হয়ে নিজেদের একটি দেশ পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ সৃষ্টি হয়েছে অনেক আগে থেকে আর স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়েছে ১৯৭১ সালে। বর্তমানে দেশে শাসন ও শোষণ করার জন্য যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে এটা জনগণের বিপক্ষে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের বিষয়ে দলের সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমরা কারো ওপরে ব্যক্তিগত মতামত চাপিয়ে দেবো না। বর্তমান সরকার দেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। সাধারণ মানুষ, ভোটের প্রার্থী এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা বলছে, আমরা ভোট দিতে পারছি না। কখনো কখনো সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারলেও সরকার ভোটের ফলাফল পাল্টে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের মলিক হচ্ছে দেশের জনগণ। তারা দেশের ও ক্ষমতার মালিকানাস্বত্ত¡ ভোটের মাধ্যমে ব্যবহার করবে। ভোটের মাধ্যমে তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। প্রতিনিধিরা জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবে। জনগণের ইচ্ছামত প্রতিনিধিরা দেশ চালাতে ব্যার্থ হলে জনগণ আবার ভোটের মাধ্যমেই প্রতিনিধি পরিবর্তন করবে। এভাবেই বৈষম্যহীন একটি দেশের মানুষের প্রত্যাশা দেশ গণতান্ত্রিকভাবে চলবে। এটাই আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা। দেশের প্রতিটি মানুষের মালিকানার চাবিকাঠি হচ্ছে ভোটাধিকার। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে সরকার স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করেছে। তাই ন্যায় বিচারভিত্তিক এবং সমতার ভিত্তিতে বৈষম্যহীন সমাজ গঠন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এটা করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের নামেই। দেশের মালিকানা হারিয়ে মানুষ এক শ্রেণির দাসে পরিণত হয়েছে। দাসদের ম্যানেজ করতে সুবিধাভোগী লাঠিয়াল বাহিনী তৈরী করা হয়েছে। মানুষের বাক ও চিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। আইন-কানুন তৈরী করে মানুষের স্বাভাবিক অধিকার খর্ব করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি মহানগর উত্তর এর বিশেষ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তর এর আহবায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে ও পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর উত্তর এর সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, সারাদেশে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশে লোক বাড়ানো হয়েছে। সারাদেশের মানুষকে নজরদারির আওয়তায় এনে এক ধরনের শাসনের মধ্যে রেখেছে। স্মার্ট বাংলাদেশের মাধ্যমে সকল মানুষকে পর্যবেক্ষণে রাখবে সরকার। কে কী করছে, কোথায় খাচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেয়া হচ্ছে। দেশটাকে জেলখানা এবং দেশের মানুষকে ক্রীতদাস বানাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশটা একটি কারাগারে পরিণত হবে আর আমাদের ক্রীতদাসের মতো থাকতে হবে। লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে পাওয়া দেশ একটি গোষ্ঠীর কাছে বন্ধক দিয়ে আমরা ক্রীতদাস হতে পারি না। আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই।
এসময় গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সাথে ছিলাম। আওয়ামী লীগ জনগণের দল ছিলো, তাদের দীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস আছে। মানুষের অধিকার আদায়ে আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগ আছে। যে আওয়ামী লীগ মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে, আমরা সেই আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছিলাম। কথা ছিলো আমরা দুর্নীতি নির্মূল করবো, বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ করবো। ভোটের অধিকার কতটা আছে তা সবাই জানে। আর ভাতের অধিকার নিয়ে দেশের মানুষ কষ্টে আছে। প্রতিদিন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, আয় বাড়ছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আর কোভিড পরিস্থিতির প্রভাব সারাবিশে^ই। কিন্তু আমাদের দেশের মতো কোন দেশই খাদের কিনারায় পৌঁছেনি। আমাদের রিজার্ভ অনেক কমে গেছে। সরকার অনেক কথাই বলছে, কিন্তু আইএমএফ বলছে আমাদের রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলার। বকেয়া পরিশোধ করলে রির্জাভ দাঁড়াবে ১৯ বিলিয়ন ডলারে। প্রতিদিনই আমাদের রিজার্ভ কমছে। বৈদেশিক মূদ্রা যা আয় হচ্ছে ব্যায় তার চেয়ে অনেক বেশি। যদিও আমরা আমদানী অনেক নিয়ন্ত্রণ করছি। আমদানী কামনোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল পাচ্ছে না কলকারখানা। নিত্যপণ্য প্রয়োজন অনুযায়ী বাজারে আসছেনা। ডলার সংকটের জন্য বেশি দামে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানী করে। ৮০ থেকে এখন ডলারের দাম ১১৫ টাকা হয়েছে। তার মানে ৮০ টাকার পণ্য ১১৫ টাকা দামে কিনে আমদানী করতে হচ্ছে। সব কিছু শ্লো হয়ে গেছে, তাই স্বাভাবিক ভাবে মানুষ আয় করতে পারছে না। অন্যদিকে রাজস্ব আয় কমে গেছে। বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী আগামী ৪ মাসে ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার খরচ হয় আমদানীর জন্য। প্রতিদিনিই ডলার কমছে। এভাবে চললে এক সময় আমাদের রিজার্ভ ফুরিয়ে যাবে। উন্নয়ণের নামে যে ঋণ হয়েছে তা জনগণের কাঁধে। উন্নয়নের নামে মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু মানুষ বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা দুর্নীতি করে পাচার করে দিয়েছে। তাই যত টাকা খরচ হয়েছে, উন্নয়ন হয়েছে খুবই কম। পৃথিবীর যেকোন দেশের চেয়ে আমাদের দেশে রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে কয়েক গুণ বেশি টাকা খরচ হয়। আবার, সরকার পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থায় অতিরিক্ত লোক নিয়োগ দিয়ে খরচ বাড়িয়ে ফেলেছে। সরকারের হাতে টাকা নেই, তাই টাকা ছাপতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসেব অনুযায়ী ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বিদেশে। একটি অসমর্থিত সূত্র অনুযায়ী, গেলো ৫ বছরে ৫ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আবার, টাকা ছাপানোর কারণে মুদ্রাস্ফিতি হয়ে মালামালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তাই মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এক শ্রেণির মানুষের হাতে আছে কোটি কোটি বিলিয়ন। আবার, মশানিধন করতে বেশি দামে নকল অসুধ কিনছে। মাদকে ছেয়ে গেছে দেশ, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার লোকজন মাদক পাচারের সাথে জড়িত। ধরা হচ্ছে, যে গরিব মানুষগুলো কিছু টাকার জন্য মাদক পরিবহন করে। মাদকের আসল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠান এর সঞ্চালনায় -জরুরি সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।
উপস্থিত ছিলেন – মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, ভাইসচেয়ারম্যান – আমার উদ্দিন আহমেদ ঢালু, মোঃ জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য নাসির উদ্দিন সরকার, কাজী আবুল খায়ের, আনিস উর রহমান খোকন, এম এ রাজ্জাক খান, যুগ্ম – সমরেশ মন্ডল মানিক,কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সাত্তার,প্রিন্সিপাল মোস্তফা চৌধুরী, মঈনুল রাব্বি চৌধুরী রুমন, আলমগীর হোসেন, মোহাম্মদ আলী, এস এম হাসেম প্রমূখ।

 
                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                     
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                