ইমরান হোসাইন আদ্রিয়ান,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষই শ্রমিক।প্রত্যেকেই কোন না কোন কাজ করছেই।মালিক আর শ্রমিক। অধিকাংশ মালিক শোষক অধিকাংশ শ্রমিক শোষিত তাই শোষক আর শোষিত শব্দদ্বয়টি ভুল হবে না।দুটি শব্দ বহন করে চলেছে এক বিরাট ব্যবধান। সেই আদি যুগের দাস প্রথা বিলুপ্ত হয়ে বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধণে শুরু হল শ্রমিকনামে শ্রমজীবি প্রথা। কালের বিবর্তনে নাম পাল্টাল মুনিবের জায়গায় মালিক আর দাসের জায়গায় শ্রমিক। কিন্তু দাসের প্রতি মুনিবের যে শোষন ছিল শ্রমিকের প্রতি মালিকের সে শোষন অব্যাহত রয়েই গেল। দাস হয়ে প্রতিবাদের ভাষা জানা ছিল না,শ্রমিক হয়ে সে প্রতিবাদের ভাষা শিখল,প্রতিবাদ করতে লাগল।তাই যুগ যুগ ধরে সে শোষনের প্রতিবাদে শোষিতদের প্রতিবাদ আন্দেলন সংগ্রাম চলে আসছে। ঐতিহাসিক মে দিবস বা শ্রম দিবস সৃষ্টির কারণ ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় মে দিবস বা শ্রম দিবস সৃষ্টি এক ভয়াবহ অমানবিক কান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে।এক পক্ষ ফুটে উঠে শোষক হিসেবে আর এক পক্ষ ফুটে উঠে নিজেদের অধিকার আদায়ে সংগ্রামী সৈনিক হিসেবে। সে কালে মালিক আর শ্রমিককের সম্পর্ক ছিল খুবই করুন। কারনে অকারনে নির্যাতিত হতো শ্রমিকরা।শ্রমের ন্যায্য মূল্যও পেত না ওরা। কাজের ছিল না নির্দিষ্ট সময় সীমা।১৫/২০ ঘন্টা পর্যন্ত খাটতে হতো তাদের। মালিক পক্ষের সকল অন্যায় অবিচার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এবং নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষে ১৮৮৬ সালের ২০ আগষ্ট ৬০টি ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিনিধিরা বাল্টিমোরে গঠন করেন ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন।কাজের সময় কমিয়ে দৈনিক আট ঘন্টা কাজের দাবীতে আন্দোলন তীব্র হতে থাকে।১৮৮৪ সালের ৭ অক্টোবর সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয় যে ১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে সারাদেশে দৈনিক আট ঘন্টা কাজের দাবীতে সকল শ্রমিক একযোগে সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।শ্রমিক সমাবেশের স্থান ঠিক হয় হে মার্কেটে স্কয়ারে।অবশেষে সে বহুল প্রতিক্ষিত দিন ১৮৮৬ সালের ১ মে শনিবার এল দ্বার প্রান্তে।এ দিন শ্রমিকরা কাজ ছেড়ে আনন্দ উৎফুল্ল সহকারে এবং ন্যায্য দাবীতে সংগঠিত হতে থাকে শিকাগো শহরের হে মার্কেট স্কয়ারে। শ্রমিক আর শ্রমিক পরিবার পরিজন সকলকে নিয়ে জীবনের তাগিদে বাঁচার তাগিদে রাজপথে নেমে মিছিল আর শ্লোগনে মুখর করে তোলে।হে মার্কেট স্কয়ারে মুখোমুখি অবস্থান নেয় মালিক ও শ্রমিক পক্ষ।শ্রমিকরা ও দাবী আদায়ে অনড়।মালিকরাও তারা তাদের কঠোর সিন্ধান্তে এমন অনড় যে শ্রমিক পক্ষের কোন দাবী মেনে নেওয়া হবে না।মালিক পক্ষের নির্দেশনায় এক পর্যায়ে চলে পুলিশের গুলি বর্ষণ।এতে দশ শ্রমিক নিহত হয়।আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে শ্রমিক আন্দোলন।শুরু হয় শাসকগোষ্টির দমন প্রক্রিয়া।শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় সাজানো মামলা।১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর স্পাইজ,এঞ্জেল,ফিসার ও পার্সনেস নামের চার শ্রমিক নেতাদের দেওয়া হয় প্রহসনমূলক ফাসিঁ।ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেদিন স্পাইজ বলেছিল,আজ তোমরা আমাদের গলাটিপে মারছ কিন্তু আমাদের নিরবতা হাজার কণ্ঠ স্বরের চেয়েও বেশী শক্তিশালী হয়ে উঠবে।এমন দিনও আসবে।ফিশার বলেছিল এটা আমার জীবনের সবচেয়ে খুশীর মুহুর্ত।এঞ্জেল বলেছিল নৈরাজ্যের জয় হোক।সর্বশেষ আসামী পার্সনেস চিৎকার সহকারে বলেছিল,হে আমেরিকার মানুষ,আমাকে কথা বলতে দাও।জনগনের কণ্ঠস্বর শোন।কিন্তু আর শোনা হল তাঁর কথা।মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ল।এভাবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতিবাদী হয়ে হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করেন তাঁরা।সে দিন হয়ত প্রশ্ন উঠেছিল কেন এমন মৃত্যু তাঁদের।আজ তাঁর উত্তর পাওয়া যায় খুব সহজে।আজ শ্রমিকরা যে টুকু সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে সে সব বীর শ্রমিদের আন্দোলন ও জীবন দানের ফসল।পরবর্তীকালে ১৮৮৯ সালের ১৪জুলাই প্যারিসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা সমবেত হয়ে দ্বিতীয় আর্ন্তজাতিক নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলে।এ সংগঠনই বিশ্বে বিভিন্ন দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলোকে তাদের স্ব স্ব দেশের সরকারের প্রতি আইন করে ৮ ঘন্টা কাজের নির্দিষ্ট সময় করে দেওয়ার প্রস্তাব উপস্থাপন করার আহবান জানান। মূলত এ দাবীর প্রেক্ষিতে ১৮৯০ সাল থেকে ১মে আর্ন্তজাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।এতটা বছর পেরিয়েও শ্রমিকদের প্রতি মালিকদের বৈষম্য দূর হয়নি।এখনো শ্রমিকরা হয় নির্যাতিত অবহেলিত।মাসের পর মাস বেতন বকেয়া।আট ঘন্টার বেশি অধিক সময় কাজ করা,ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাজ করার চাপ।যার ফলে ভবন ধসে ও আগুনে পুড়ে শ্রমিকদের মৃত্যুবরণ,থাকা,খাওয়া,চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সুবিধা বঞ্চিত আজো শ্রমিকরা। মানব সভ্যতার বিকাশের ধারায় শ্রমিকগোষ্ঠির গনতান্ত্রিক অধিকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বীকৃত হলেও আমাদের দেধে অধিকাংশ শ্রমিক অধিকার বঞ্চিত,নির্যাতিত ও শোষিত।একটু দৃষ্টি দিলেই তা পরিলক্ষিত হবে।নেই উন্নত কাজের পরিবেশ,নিরাপত্তাহীনভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়।ন্যায্য পাওনা বঞ্চিত।আবার অনেক ক্ষেত্রে তা ও বকেয়া।এছাড়া আর্ন্তজাতীকভাবে স্বীকৃত কর্মঘন্টার নিয়মও পালন হয়না।কর্মযন্ত্র মনে করে শুধুমাত্র কাজ আদায় করা হচ্ছে। যেখানে রানা প্লাজার মত ভবন ধসে ও তাজরীন গার্মেন্টেসের মত ভবনে আগুনে শত শত শ্রমিকের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। এটাই হচ্ছে কাজের পরিবেশ।আরো গভীর দৃষ্টিপাত দিলে আরো করুন চিত্র ও শ্রমিকদের করুন কাহিনী ফুটে উঠবে। বিশেষ করে শিশু ও নারী শ্রমিকরা অধিকতর শোষিত হচ্ছে। শ্রম আইনের প্রতি বৃদ্ধঙ্গুলি প্রদর্শনমূলক ওদের শোষন করা হচ্ছে। প্রায় ১২৯ বছর আগে থেকে অধিকার আদায়ের যে আন্দোলন শুরু আজো ন্যায্য অধিকার আদায়ে শ্রমিকরা তাদের সে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হচ্ছে। বিদেশের মাঠিতেও আমাদের শ্রমিকভাইদের স্থান গৌরবজ্জল। নানা কষ্টের মাঝে তারা অর্থ উপার্জন করে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছে।অধিকাংশ শ্রমিক ভাই থাকা খাওয়ার সমস্যাসহ নানা সমস্যার মাঝে বিদেশের মাঠিতে অর্থ উপার্জন করছে।দেশের মাঠিতেও এসে তাদের হতে হয় নানা হয়রানীর স্বীকার।পাসপোর্ট ও ভিসা প্রসেসিং,বিমান বন্দরসহ নানাভাবে বিব্রতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।এ ব্যাপারে সরকারের সু দৃষ্টি প্রয়োজন।এছাড়া প্রবাসীদের দেশে মূলধন বিনোয়োগে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতিব জরুরী ।তাহলেই তাদের শ্রমের স্বার্থক হবে। রাজপ্রাসাদ গড়ে উঠছে,গার্মেন্টস,শিল্প কলকারখানা চলছে,গাড়ীর চাকা ঘুরছে,মাঠে ফসল ফলছে এভাবে প্রতিটা ক্ষেত্রে
শ্রমিকদের শ্রম রয়েছে।তাই তাদের অবহেলা চরম অমানবিক।তাঁদের পিছিয়ে রেখে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।এভাবে চরম ক্ষতির সম্মূখিন হচ্ছে মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষ।কোন অপকৌশলের ফাদে পরে কারনে অকারনে শ্রমিকদের রাজপথে নামিয়ে ধর্মঘট, মিল কারখানা গাড়ি ভাঙ্গচুরের মত ঘটনাও ঘটায়।আমাদের ভাবতে হবে প্রতিষ্ঠান বাঁচলে আমাদের কাজ করার সুযোগ থাকবে।তাই এ প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের বাঁচাতে হবে।নিজেদের প্রতিষ্ঠান মনে করে।নিজেদের অন্নস্থান মনে করে।তবে মালিক পক্ষের অন্যায় অবিচারের সাথে আপোষের কথা বলছিনা।বলছি প্রতিবাদ হোক তবে ধবংসাত্মক বা নৈরাজ্য নয়। বর্তমান দেখা যায় বিভিন্ন শ্রমিকসংগঠন শুধুমাত্র মে দিবস এলেই কিছু সভা সমাবেশের মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব শেষ করে।বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রচার করার উদ্দেশ্যে।সারা বছর কোন খবর থাকেনা সাধারন শ্রমিকদের। সাধারন শ্রমিকদের মাঝে বৃদ্ধি করা হয়না অধিকার সচেতনতা।জানানো হয়না ঐতিহাসিক মে দিবসের পটভূমি।
Sign in
Sign in
Recover your password.
A password will be e-mailed to you.
Trending
- সুবিধা না পেয়ে আটকে গেছে ২৪ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন
- নেত্রকোণায় ট্রাকচাপায় শিশুর মৃত্যু
- টাঙ্গাইলে আ. লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
- প্লট বিক্রির নামে প্রতারণা, পরিচালকের শাস্তি চান ভুক্তভোগীরা
- বাজারে এলো QJ Motors-এর বাইক
- আবরার ফাহাদ হত্যায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
- ফেনীতে ৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টি
- সৌদিতে পৌঁছেছেন ১৭৬৯৪ হজযাত্রী
- পদ্মার এক কাতল ঢাকায় গেল অর্ধলাখ টাকায়
- সরকারি সফরে কাতার গেছেন সেনাবাহিনী প্রধান

Prev Post