অনলাইন ডেস্ক: বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করতে গেলে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগে। এখন থেকে ন্যূনতম ২০ শ্রমিকের সায় থাকলেই যে কোনো কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে। এমন বিধান রেখে বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
গতকাল বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সরকারপ্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন সমকালকে বলেন, সংশোধনী আইনে ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কোনো শতাংশ রাখা হয়নি। ২০ শ্রমিক হলেই তারা ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারবে। শিগগির এই আইনের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
মালিক পক্ষও শতাংশের বদলে সংখ্যার ব্যাপারে সম্মত ছিল। তবে পোশাক কারখানা ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ২০ থেকে আরও বেশি হোক, এটা চাচ্ছিল মালিক পক্ষ।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, নতুন শ্রম আইন অনুযায়ী, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনেক সহজ করা হয়েছে। শ্রমিকের জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে, যাতে আদালতে না গিয়েও বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায়। তিনি বলেন, আইনে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আইনের ৯০টি সেকশনে এবং তিনটি শিডিউলে সংশোধন আনা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার যে কমিটি আছে, তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সংশোধনগুলো করা হয়েছে। শ্রমিকের স্বীকৃতি পেলেন গৃহপরিচারক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা
আসিফ নজরুল বলেন, এখন থেকে শ্রম আইন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের কর্মী, গৃহপরিচারক, নাবিকসহ দীর্ঘদিন শ্রম আইনের সুরক্ষার বাইরে থাকা শ্রমজীবীর অধিকার নিশ্চিত করতে শ্রম আইনে এই বিধান যুক্ত করা হয়েছে। শ্রমিকের সংজ্ঞা বর্ধিত করা হয়েছে গৃহপরিচারক ও নাবিকের ক্ষেত্রে। তারাও এখন শ্রমিক হিসেবে আইনের সুরক্ষা পাবেন। যাদের বিরুদ্ধে মালিক পক্ষের অভিযোগ থাকত তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হতো, তারা অন্য কোথাও চাকরি পেত না। সেটিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কঠোর বিধান করা হয়েছে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে। অন্তঃসত্ত্বা যারা আছেন, তাদের কল্যাণ সুবিধা অনেক বাড়ানো হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, বেতন নিয়ে বৈষম্য ছিল। ছেলেদের একই কাজ মেয়েরা করলে কম বেতন দেওয়া হতো। সেই বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কর্মস্থলে দুর্ঘটনা হলে সেটার জন্য একটা তহবিল প্রস্তুত করার কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ আইনে শ্রমিক-মালিক সম্পর্ককে আরও মানবিক ও ন্যায্য করার চেষ্টা করা হয়েছে। এটি শুধু শ্রমিক নয়, পুরো শিল্প খাতের জন্যই নতুন যুগের সূচনা করবে। আমরা চাই একটি এমন শ্রমনীতি, যা একদিকে শ্রমিকের অধিকার রক্ষা করবে, অন্যদিকে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখবে।

 
                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                     
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                