অনলাইন ডেস্ক : আগুনে পোড়া রোগীদের সেরে ওঠার জন্য কখনো কখনো একমাত্র অবলম্বন হয়ে ওঠে ত্বক প্রতিস্থাপন। এ জন্য সাধারণত নিজ ত্বকই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ‘মেজর বার্ন’, অর্থাৎ দেহ ব্যাপকভাবে পুড়ে গেলে সেটা কঠিন হয়ে পড়ে। ‘মেজর বার্ন’ মানে রোগীর দেহের ৩৫-৫০% বা আরও বেশি পুড়ে যাওয়া। এমন পরিস্থিতিতে রোগীর নিজের সুস্থ চামড়া পোড়া অংশ সম্পূর্ণ ঢেকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হয় না। আবার দ্রুত সময়ের মধ্যে শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ চামড়া দিয়ে ঢেকে দিতে না পারলে রোগীর দেহ থেকে দ্রুত পানি, লবণ, প্রোটিন এবং তাপ বেরিয়ে যায়। ফলে তৈরি হয় মারাত্মক ডিহাইড্রেশন, শক এবং সংক্রমণের ঝুঁকি। এ পরিস্থিতিতে দাতার চামড়া ব্যবহার করে পোড়া অংশ সাময়িকভাবে ঢেকে দিয়ে রোগীর জীবন বাঁচানো যেতে পারে।
এ লক্ষ্য নিয়েই গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে ‘স্কিন ব্যাংক’। অর্থাৎ ত্বক ব্যাংক। দগ্ধ রোগীদের অত্যাধুনিক চিকিৎসায় এটি যে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ, তা বলা বাহুল্য। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি’তে এই স্কিন ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। ফলে গুরুতর পোড়া রোগীদের ক্ষতস্থানে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে চামড়া প্রতিস্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান এই স্কিন ব্যাংক উদ্বোধন করেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, পোড়া রোগীদের জীবন বাঁচাতে এবং মৃত্যুহার কমাতে এটি অত্যন্ত জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সহযোগিতায় বাংলাদেশের ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি এই সেট আপ এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা করেছে।
এক বিবৃতিতে বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, ‘গুরুতর দগ্ধ হলে শরীর থেকে পানি, লবণ, প্রোটিন ও তাপ দ্রুত বেরিয়ে যায়। যদি পোড়ার পরিমাণ বেশি হয় এবং রোগীর শরীর থেকে চামড়া নেওয়া সম্ভব না হয়, তখন স্কিন ব্যাংক থেকে সংগৃহীত চামড়া প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে একদিকে যেমন রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমে, তেমনি দ্রুত নতুন চামড়া তৈরিতেও সহায়তা করে।’
ইতিমধ্যে এই স্কিন ব্যাংক থেকে সংগৃহীত চামড়া প্রতিস্থাপন করে অনেক রোগীকে সারিয়ে তোলা হয়েছে। এরকমই একজন দুই বছর বয়সী শিশু হামিদা। শিশুটির মা রাবেয়া বেগমের ভাষ্যে জানা যায়, গরম পানিতে পুড়ে হামিদার দেহের ৪২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে তার রক্তে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। এই রোগের নাম সেপ্টিসেমিয়া। এতে হামিদার ক্ষত থেকে ক্রমাগত রক্ত ও পুঁজ বের হচ্ছিল। তাই স্কিন ব্যাংক থেকে চামড়া সংগ্রহ করে হামিদার দেহে ৩৫২.৫ সেন্টিমিটার ত্বক প্রতিস্থাপন করা হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কিন ব্যাংক ব্লাড ব্যাংকের মতোই স্বীকৃত। বহুদিন ধরেই কার্যকর চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে।
আট বছর বয়সী মরিয়ম নামে এক শিশুর চিকিৎসাতেও কাজে লেগেছে এই স্কিন ব্যাংক থেকে সংগৃহীত চামড়া। মরিয়মের দেহে প্রায় ৭৭৯ সেন্টিমিটার পোড়া অংশ এই সংগৃহীত চামড়া দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ফলে তার অবস্থার উন্নতি ঘটেছে।
এরকম আরও বহু রোগীকে সারিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখছে স্কিন ব্যাংক। সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনায় এ ধরনের রোগীকে সারিয়ে তুলতে এর ভূমিকা দিন দিন বাড়ছেই।
স্কিন ব্যাংক কি নিরাপদ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কিন ব্যাংক ব্লাড ব্যাংকের মতোই স্বীকৃত। বহুদিন ধরেই কার্যকর চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে। এ প্রসঙ্গে স্কিন ব্যাংকের কো-অর্ডিনেটর ডা. মাহবুব হাসান এক বিবৃতিতে জানান, একজন সুস্থ ব্যক্তি জীবদ্দশায় একাধিকবার চামড়া দান করতে পারেন। পাশাপাশি মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও মৃত্যুর ৬ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব। সাধারণত পিঠ ও পা থেকে চামড়া সংগ্রহ করা হয়। আর চামড়া দানে আইনগত কোনো বাধা নেই এবং এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ।