পূর্বঘোষিত আল্টিমেটাম অনুযায়ী গত ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরি-বিধিমালা প্রণয়ন ও প্রকাশ না করায় শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি এবং সব ধরনের যাত্রী সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিদিন ডিএমটিসিএল প্রধান কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ডিএমটিসিএল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, ২০১৩ সালে ডিএমটিসিএল প্রতিষ্ঠার ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটির ৯০০-র বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য এখনো কোনো স্বতন্ত্র চাকরি-বিধিমালা চূড়ান্ত হয়নি। তাই ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক অপারেশন শুরু হওয়ার পর থেকে উন্মুক্ত নিয়োগে যোগ দেওয়া এসব কর্মচারী দিন-রাত দায়িত্ব পালন করলেও ছুটি, সিপিএফ, গ্র্যাচুইটি, শিফট-অ্যালাউন্স/ওভারটাইম, গ্রুপ ইনস্যুরেন্সসহ নানামুখী মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তারা আরও জানান, ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর উপদেষ্টা কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে সার্ভিস রুল প্রণয়নের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। পরে ২০২৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কর্মচারীরা আন্দোলনে নামলে ২০ ফেব্রুয়ারি কর্তৃপক্ষ ২০ মার্চের মধ্যে সার্ভিস রুল চূড়ান্তের আশ্বাস দেয়। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন না হওয়ায় ৯ মাস ধরে কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দানা বাঁধে। তবে গত ১০ ডিসেম্বর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্মচারীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় জানান সার্ভিস রুলের সব ধারা নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ একমত হলেও ‘বিশেষ বিধান’ সংক্রান্ত একাদশ অধ্যায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ‘বিশেষ বিধান’ মেট্রোরেল প্রকল্পসমূহের জনবলকে ডিএমটিসিএলে আত্মীকরণ করার বিষয় জড়িত, যা কর্মচারীদের দাবি—বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ডিএমটিসিএল কর্মচারীদের অভিযোগ, পরিচালনা পর্ষদ বিতর্কিত বিধান বাদ দিতে আগ্রহী হলেও ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষের চাপের কারণেই সার্ভিস রুল প্রকাশ বিলম্বিত হচ্ছে।
যাত্রী সেবা বন্ধের কারণে মেট্রোরেল ব্যবহারকারী কয়েক লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়লেও ডিএমটিসিএল কর্মচারীরা বলছেন, এই কর্মসূচির সম্পূর্ণ দায় ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। আমরা বাধ্য হয়েই কর্মবিরতিতে যাচ্ছি। কর্মবিরতির পাশাপাশি প্রতিদিন ডিএমটিসিএল প্রধান কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, চাকরি-বিধিমালা ছাড়া ক্যারিয়ার, বেতন-সুবিধা এবং ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত নয়, তাই আর কোনো আশ্বাস নয়, প্রকাশিত সার্ভিস রুল ছাড়া কোনো সমাধান নয়।
