নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে (৫৫) প্রকাশ্যে ফিল্মি স্টাইলে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দুই শ্যুটারকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রুবেল ও ইব্রাহিম। এ ছাড়া এ ঘটনায় রুবেল ও ইব্রাহিমের এক সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তার নাম জানা যায়নি। তাদের কাছ থেকে দুটি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের লালবাগের একটি টিম।
ডিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ডিবি পুলিশের লালবাগ বিভাগের একটি টিম তাদের গ্রেপ্তার করে।
এর আগে সোমবার (১০ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফটকের সামনে মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান শফিকুল ইসলাম জানান, আগামীকাল বুধবার সকল বিষয় সাংবাদিকদের কাছে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে ফিল্মি কায়দায় প্রকাশ্যে মামুনকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। পরে ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থলের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মামুন দৌড়ে কোনো একটি ভবনের গেট দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। তখন পেছন থেকে দুই ব্যক্তি তাকে খুব কাছ থেকে মুহুর্মুহু গুলি করে। পরে তারা সেখান থেকে হেঁটে চলে যায়। দুর্বৃত্তদের মুখে ছিল মাস্ক, মাথায় ক্যাপ। দুজনের সঙ্গেই ছিল পিস্তল।
ময়নাতদন্তে মামুনের শরীরে সাতটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ছয়টিই শরীর ছেদ করে বেরিয়ে যায়। বাকি বুলেটটি ময়নাতদন্তের সময় বের করা হয়। ঢামেক হাসপাতাল মর্গের একটি বিশ্বস্ত সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নিহত মামুন একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী:
জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে জানা যায়, মামুনের বাবার নাম এস এম ইকবাল। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার মোবারক কলোনি এলাকায়। মামুনের স্ত্রীর দাবি, মামুন পেশায় ব্যবসায়ী। তবে পুলিশ বলছে, নিহত মামুন চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী। একসময় আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী ছিলেন মামুন।
এ বিষয়ে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী বাংলানিউজকে বলেন, নিহত ব্যক্তি ইমন-মামুন গ্রুপের মামুন। তিনি এক সময় সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী ছিল। তিনি একজন ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’।
আগেও হামলার শিকার হয়েছেন মামুন:
দুই বছর আগেও একবার মামুনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। ২৪ বছর কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হওয়ার কয়েক দিন পর ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। একপর্যায়ে মামুন গাড়ি থেকে নেমে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন তাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। তবে সেই ঘটনায় ভুবন চন্দ্র শীল নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী গুলিতে নিহত হন।
খুনের মামলায় হাজিরা দিতে আদালত পাড়ায় এসেছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন:
প্রায় ২৯ বছর আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জাহিদ আমিন ওরফে হিমেল নামের এক যুবককে হত্যার ঘটনায় করা মামলার আসামি ছিলেন মামুন। সেই মামলায় হাজিরা দিতেই আদালতে এসেছিলেন মামুন।
সকাল সাড়ে ১০টায় এ মামলার শুনানি হয়। মামুন সেই মামলায় হাজিরা দেন। কিন্তু মামলার কোনো সাক্ষী না আসায় আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত। বেলা পৌনে ১১টার দিকে মামুন আদালত থেকে বের হন। এর কিছুক্ষণ পরেই মোটরসাইকেলে করে এসে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে হত্যা করে।
মামুন হত্যায় ইমন জড়িত থাকার সন্দেহ
মামুন এক সময় ঢাকার আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী ছিলেন। তবে অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। সেই কোন্দল থেকেই এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। মামুনের পরিবার থেকেও এ সন্দেহ করা হয়েছে।
তার স্ত্রী বিলকিস আক্তার বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের লোকজন এ হত্যার সঙ্গে জড়িত। এর আগেও ইমনের লোকজন মামুনকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ও মামুন একসময় হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকার আতঙ্ক ছিলেন। তাদের গড়ে তোলা বাহিনীর নাম ছিল ‘ইমন-মামুন’ বাহিনী। তারা দুজনই চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলার আসামি।
