নিজস্ব প্রতিবেদনঃ গত ৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ঈদুল আজহার ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি ও আদালতের নির্ধারিত অবকাশ শেষে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে। দীর্ঘ প্রায় দুই সপ্তাহের বিরতির পর আগামী রোববার, অর্থাৎ ২৩ জুন থেকে পুনরায় নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকার্য পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট বিচারিক এখতিয়ার দিয়ে ৪৯টি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। এই বেঞ্চগুলোর তালিকা সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।
গঠিত বেঞ্চগুলোর মধ্যে ২৮টি দ্বৈত বেঞ্চ এবং ২১টি একক বেঞ্চ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রতিটি বেঞ্চকে নির্দিষ্ট বিষয়ে বিচারিক এখতিয়ার দিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে করে বিচারপ্রার্থী সাধারণ জনগণ সহজে ও সুষ্ঠুভাবে বিচারিক সহায়তা পেতে পারেন। বেঞ্চসমূহ দেওয়ানি, ফৌজদারি, সংবিধান, রিট, কোম্পানি, কর এবং অন্যান্য বিশেষায়িত বিষয়ভিত্তিক মামলার শুনানি গ্রহণ করবে।
প্রধান বিচারপতির এই উদ্যোগকে বিচার সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। আদালত অঙ্গনের সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, দীর্ঘ ছুটির পর নতুনভাবে গঠিত বেঞ্চগুলো বিচারিক কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনবে এবং বিচার প্রক্রিয়া আরও কার্যকর ও সময়োপযোগী হবে।
অবকাশকালীন সময়েও সম্পূর্ণভাবে থেমে ছিল না বিচারিক কার্যক্রম। হাইকোর্টের নির্ধারিত ভ্যাকেশন বেঞ্চ এবং আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত নির্দিষ্ট দিনে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি মামলার শুনানি পরিচালনা করেছে। এ সময় জেলখানা থেকে আগত বন্দীদের জামিন সংক্রান্ত আবেদন, জরুরি রিট ও হাইকোর্টের আদেশ কার্যকরের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
বিশেষ করে ঈদের আগে এবং পরে মানবিক দিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু মামলার শুনানি হয়েছে চেম্বার আদালতে। আইনজীবীরা এই ধারাবাহিকতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন, কারণ এতে জরুরি আইনি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হননি বিচারপ্রার্থীরা।
সুপ্রিম কোর্টে নতুন বেঞ্চ গঠন ও নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম শুরুর খবরে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে আদালতপাড়া। আইনজীবী, বিচারক, কোর্টকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। নতুন করে শুরু হওয়া বিচারিক কার্যক্রমের মাধ্যমে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিদিন হাইকোর্ট বিভাগে শত শত মামলা তালিকাভুক্ত হয়। এসব মামলার শুনানির জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিচারপতিদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নতুন বেঞ্চ গঠনের ফলে কিছু পুরোনো মামলার শুনানি দ্রুত শুরু হবে, আবার কিছু নতুন আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত করা হবে। আদালত-ভবনে বাড়বে আগের মতোই জনসমাগম, কোলাহল ও আইনি লড়াইয়ের চিরচেনা দৃশ্য।
আইনজীবীদের সংগঠনগুলো বলছে, ছুটি শেষে সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বিচার প্রক্রিয়া আবার গতি পাবে। জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম হবে।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবীরাও। তারা মনে করেন, বর্তমান সময়ে বিচার বিভাগের গতিশীলতা নিশ্চিত করতে এরকম সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
এবারের অবকাশ শেষে নিয়মিত বেঞ্চগুলোর কার্যক্রম শুরুর ফলে বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আরও সুদৃঢ় হবে বলেই মনে করছেন অনেকে।