জেলা প্রতিনিধিঃ রাজধানী ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিভাগীয় নগরী রংপুর। সাধারণ বিপ্লবী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে রংপুর জিলা স্কুল মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়।
মিছিলটি শহরের প্রায় ৬ কিলোমিটার হেঁটে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণের পর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মিছিল থেকে শিক্ষার্থীরা ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, চাঁদাবাজ নো মোর’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘চব্বিশের বাংলায়, চাঁদাবাজের ঠাঁই নাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘চাঁদাবাজের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘চাঁদাবাজের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘হত্যা করার অধিকার, কে দিল রে জানোয়ার’? ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ পালানোর পর তাদের ফাঁকা জায়গা দখল করেছে একটি দল। এক বছরেই তারা সারা দেশে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারি ও খুনোখুনির মাধ্যমে জনগণের জীবনে ভয়ংকর অনিরাপত্তা তৈরি করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির সদস্য সচিব আশফাক আহমেদ জামিল বলেন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করার জন্য জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা রক্ত দেয়নি। ঢাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে একজন ব্যবসায়ীকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগকে হার মানিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে। যারা চাঁদাবাজি ও দখলদারি শুরু করেছে তাদের বিচারের মুখোমুখি না করলে এদেশের ছাত্র-জনতা আবারও রাজপথে নামবে।
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) মহানগর কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী আলমগীর কবির বলেন, পাঁচ আগস্টের পর নব্য-ফ্যাসিবাদের কায়দায় যারা দখলদারি, টেন্ডারবাজি ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে তারা নিজেদের রাষ্ট্রের মালিক ভাবা শুরু করেছে। তাদের হুঁশিয়ারি করতেই আজকের এ বিক্ষোভ মিছিল।
বিক্ষোভে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, গণঅধিকার ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অংশ নেন।
মিছিল ঘিরে রংপুর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। পুরো কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়। তবে গোটা পথজুড়েই ছিল সেনাবাহিনী ও পুলিশের কড়া নজরদারি।
এদিকে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার রাতে রংপুর নগরীতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও কারমাইকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় জাতীয় নাগরিক পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। তারা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি জানান।
এদিকে সন্ধ্যায় জাতীয় নাগরিক পার্টি রংপুর প্রেসক্লাব চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছে।