এম,এ ছাত্রছাত্রীদের বিদায় সংবর্ধনায় ড:আব্দুর রশীদ স্যারের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য।

0 5,128

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে এম,এ ছাত্রছাত্রীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিভাগের শিক্ষকগণ ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত দিক নির্দেশনা মূলক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন।এসময় বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান,ইসলামিক স্টাডিজ এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি ও প্রবীন অধ্যাপক ড: আব্দুর রশীদ ছাত্রছাত্রীদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে ভবিষ্যতে মানুষের জন্য, দেশের জন্য, জাতির জন্য আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করার কথা বলেন।

তিনি বলেন, বুখারি শরীফে বর্ণিত একটি হাদীসে মহা নবী (স.) বলেছেন- অধিকাংশ মানুষ দুটো জিনিসের ধোঁকায় পড়ে,একটি হচ্ছে – সুস্হতা, আরেকটি হচ্ছে – সময় বা সুযোগ পাওয়া। এ দুটো বিষয়ে তারা সজাগ থাকে না বা কাজে লাগায় না।
যখন সুস্হ থাকে তখন তার খারাপ প্রবৃত্তিগুলো প্রকাশ পায়। আর যখন সময় ও সুযোগ পায় তখন যথার্থ অর্থে সেটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগায় না।
যেমন আজ তুমি টিচারদের কাছে ক্ষমা চাইলে। কিন্তু আজকের পর তোমার এই অবস্হান থাকবে না। বরং এখন থেকে তোমাদের ক্ষমা করতে হবে অন্যকে।

আজকের পর তোমার দোষ ধরার, তোমার সমালোচনা করার লোকের অভাব থাকবে না। আর তাই তোমাকে চরম ধৈর্য সহকারে সামনে এগুতে হবে। জীবনের এ বিষয়গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ।
জীবন খুবই সামান্য, তথা কয়েক বছরের জন্য।তাই প্রকৃত জীবন যাপনের জন্য বিবাহ করে নাও। রাসূল (সঃ) বলেছেন – অতি দ্রুত বিবাহ করে নাও যখন তোমরা বালেগ হবে। আর আমরা বলি সময় হোক। এভাবে কেটে যায় বহুদিন। তুমি অফুরন্ত হায়াত নিয়ে আসো নি। ফুল সময় মত ফোঁটে আর সময় মত ঝরে। অতএব তুমি মনে করোনা তোমার এ যৌবন উদ্দীপ্ততা শত শত বছর দীর্ঘমেয়াদী হবে। রিযিকের মালিক আল্লাহ। আল্লাহ সব কিছু পরিমিত দিয়েছেন যেমন তোমার হাসি, কান্না সবই পরিমিত।কিছুই অফুরন্ত নয়। হাসি আর কান্না,সুখ আর দুঃখ চক্রাকারে ঘোরে।
অতএব তোমার যৌবন চিরদিন থাকবে না। কোন কিছুই খুব দীর্ঘমেয়াদী নয়।
তোমাদের জীবনে আত্মত্যাগ করার মানসিকতা তৈরি কর। সবার জন্য আত্মত্যাগ করা এখন থেকে শুরু কর। যত বেশি আত্মত্যাগ করবে তত বেশি সুখি হবে।
তোমার জীবনে যা কিছু আছে তোমার হাঁটা, শোয়া, খাওয়া, ঘুমানো, তোমার ভালোবাসা, অভিমান সব হতে হবে ইসলাম তথা কুরআন সুন্নাহর আলোকে। অতএব যা ইচ্ছা তাই চাইবো,যা ভালো লাগবে তা ই করবো-এ মানষিকতা ভালো না।হালাল হারাম, বৈধ অবৈধ ভেবে-মেনেই প্রত্যেকটি কাজ করতে হবে। হালাল হারাম না ভেবেই সব কিছু চাই-এটি একজন মুসলমান নর নারীর জন্য শোভা পায় না।
আর এ বিভাগের বলে নিজেকে ছোট মনে করবে না। কারণ এ বিভাগ থেকেই পড়া শেষ করে আমাদের ছাত্র এখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সম্পাদক ও তো কোথাও বাঁধা পায় নি।
এমন আরো অনেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন যোগ্যতার কারণেই। যখন নিজের ভেতর দূর্বলতা থাকে তখনই সামনে এগুনো যায় না। তাই নিজেকে যোগ্য করে তোলো। তোমার যোগ্যতার জন্যই সবাই তোমাকে খুঁজে নেবে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে। দৈনিক কুরআন তিলাওয়াত করতে ভুলবে না। এটি আমার বিশেষ অনুরোধ। কুআন পড়বে, কুরআনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলবে। কুরআন তোমায় সুউচ্চ মর্যাদায় নিয়ে যাবে।
মাবাবার সেবা করবে সব টুকু ভালোবাসা আর সামর্থ্য দিয়ে। নবীজী বলেছেন,মায়া নিয়ে মাবাবার দিকে নজর করলে প্রতিটি নজরে একটি করে মকবুল হজের সাওয়াব হয়। আল্লাহ ও রাসুলের পরে মাবাবাই তোমার সবচেয়ে আপন ও শ্রদ্ধার পাত্র।
তোমাদের কোনো দিন বিদায় দেবো না।তোমরা আমাদের, আমরা তোমাদের।এ বন্ধন চিরকালের।যা কোনো দিন ছিন্ন হওয়ার নয়।
অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হবে। যোগাযোগ রাখরে বিভাগের সাথে। বিভাগের উন্নয়নে সহযোগী হবে।
মহান আল্লাহ তোমাদের দীর্ঘ ও সাচ্ছন্দ্যপূর্ন সুন্দর জীবন দান করুন।তোমাদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি।এসময় ছাত্রছাত্রীরা উনার কথা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ২০১৮ সালে এম,এ পাশ করে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের বিদায় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড: শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এ বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ ও ছাত্রছাত্রীবৃন্দ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.