কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করতে অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১১টা থেকে বিকেল পৌণে ৪টা পর্যন্ত টানা অভিযান চলে উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর বাজার, পান্টি গোলাবাড়ি মোড়, নওশের মোড় এবং ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় এলাকায়।
এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিজয় কুমার জোয়ার্দার। তাকে সহযোগিতা করেন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এবং কুমারখালী থানা পুলিশ।
অভিযানে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে অবৈধভাবে একটি পাকা দোকানঘর নির্মাণ করছিলেন স্থানীয় এক ব্যক্তি—জামাল উদ্দিন, যিনি জলিল শেখের ছেলে। অভিযোগের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে গিয়ে নির্মাণাধীন স্থাপনাটি গুড়িয়ে দেয় এবং তাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করে।
তবে এটি ছিল কেবল শুরু। অভিযানে আরও বিস্তৃতভাবে দেখা যায় যে, পান্টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে অস্থায়ী এবং স্থায়ী দোকান বসিয়ে সড়ক দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন অনেকেই। ফলে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছিল এবং এলাকাবাসীকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছিল।
অভিযানে অন্তত ৫০টির বেশি দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়। এসব দোকানের অধিকাংশই ছিল কাঠ, টিন ও পলিথিন দিয়ে তৈরি অস্থায়ী ঘর। কিছু দোকানে দৈনন্দিন মুদি মালামাল, চায়ের দোকান, ফলের দোকানসহ নানা রকমের সামগ্রী বিক্রি হচ্ছিল।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিজয় কুমার জোয়ার্দার বলেন, “সরকারি জমি এবং রাস্তাঘাট দখল করে কোনো ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করা বেআইনি। আমরা বারবার স্থানীয়দের সচেতন করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেননি। তাই আজকে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই অবৈধ দোকান উচ্ছেদের ফলে রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে, যানজট কমেছে এবং জনসাধারণ স্বস্তি পেয়েছেন। ভবিষ্যতেও এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
অভিযান চলাকালে বেশ কিছু দোকানদার নিজেদের মালামাল সরিয়ে নিতে শুরু করেন, তবে কেউ কেউ প্রথমে প্রতিবাদ করলেও প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে পরবর্তীতে তারা সরে যান।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাই বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা দেখে আসছিলাম। রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলাও কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল। আজকে প্রশাসন এসে পরিষ্কার করেছে, আমরা খুশি।”
আরেক ব্যবসায়ী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন, “আমরা জানতাম এটা অবৈধ। বারবার বলেছিল প্রশাসন, কিন্তু অনেকেই কথা শুনে না। এখন বুঝছে ভুল করেছে।”
এই অভিযান স্থানীয় জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করলেও অধিকাংশ মানুষ প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা চান, নিয়মিতভাবে এমন নজরদারি বজায় থাকুক।
এদিকে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পান্টি ইউনিয়নের পর অন্য ইউনিয়নগুলোতেও এমন অভিযান চালানো হবে। বিশেষ করে যেখানে সরকারি জায়গা বা সড়ক দখল করে বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি হয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সার্বিকভাবে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ অভিযান একটি দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা অন্য উপজেলাগুলোকেও এমন ব্যবস্থা গ্রহণে উৎসাহিত করবে।