জেলা প্রতিনিধি: ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের দাবিতে ফরিদপুরের সর্বস্তরের মানুষ রোববার (১৪ জুলাই) সকালের বেলায় এক ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেছেন। ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে জেলার অন্তত ২০টির অধিক সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠন, সাংবাদিক সমাজ এবং সাধারণ জনগণ একত্রিত হয়ে তাদের একক দাবি উত্থাপন করেন — “ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক দ্রুত চার লেনে উন্নীত করতে হবে।”
গণদাবি তুলে ধরলেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন ফরিদপুর নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সভাপতি আবরার নাদিম ইতু, যিনি বলেন,
“এই মহাসড়কটি শুধু ফরিদপুর নয়, বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনযাত্রার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিদিন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। চার লেনে উন্নীত করলেই কেবল পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব।”
ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপন বলেন,
“এই সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত। জনগণের দাবির প্রতি সরকারের অবিলম্বে সাড়া দেওয়া উচিত।”
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন এনসিপির জেলা কমিটির সভাপতি কাজী রিয়াজ, সদস্য সচিব সোহেল রানা, ড্যাবের সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান শামীম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুস সামাদ, সাংবাদিক মফিজ ইমাম মিলন, সমাজসেবক চৌধুরী ফারিয়ান ইউসুফ, ফরিদপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান সিদ্দিকী প্রমুখ।
তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে জানান, কীভাবে বর্তমান সংকীর্ণ মহাসড়ক দুর্ঘটনা ও যানজটের কারণ হয়ে উঠেছে।
জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান
মানববন্ধন শেষে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়, “দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক বিকাশ, পণ্য পরিবহন, চিকিৎসা ও শিক্ষাক্ষেত্রে গতিশীলতা আনতে হলে এ মহাসড়কটি চার লেন করার বিকল্প নেই। এটি শুধু একটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, এটি জনজীবনের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের পূর্বশর্ত।”
জেলা প্রশাসক স্মারকলিপি গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দ্রুত পাঠানোর আশ্বাস দেন বলে জানা গেছে।
আল্টিমেটাম: ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শুরু না হলে মহাসড়ক অবরোধ
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসে চার লেন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান ওয়ালিদের বক্তব্যে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন,
“আমরা আর ধৈর্য্য ধরবো না। আগামী ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে যদি কাজ শুরু না হয়, তাহলে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করবো। তখন দায়ভার প্রশাসন ও সরকারকে নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, ফরিদপুর থেকে বরিশাল পর্যন্ত সড়কটি দেশের অর্থনৈতিক ও সাংগঠনিক দিক দিয়ে একটি ‘লাইফলাইন’। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট উপেক্ষিত থাকলে দক্ষিণাঞ্চল পিছিয়ে পড়বে।
মহাসড়কের গুরুত্ব
ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কটি দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। তবে এর বর্তমান সংকীর্ণ গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রতিনিয়তই যানজট ও দুর্ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়া পদ্মা সেতু চালুর পর এই রুটে যানবাহনের চাপ বহুগুণে বেড়েছে। অথচ মহাসড়কটি এখনও দুই লেনে সীমাবদ্ধ, যা ভবিষ্যতের উন্নয়ন কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ
মানববন্ধনে ফরিদপুরের সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, আইনজীবী, পরিবহন শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। সবার কণ্ঠে ছিল একটি কথাই — “চার লেন চাই, নিরাপদ পথ চাই।”
উপসংহার
ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার দাবি এখন শুধুই একটি উন্নয়ন প্রকল্প নয়; এটি এক জনতার প্রত্যাশা, একটি জীবন্ত দাবি। সরকার যদি এই আহ্বানে সাড়া না দেয়, তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা।

 
                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                     
                        
                         
                                     
                                                                             
                                     
                                     
                                 
                                 
                                 
                                