ভাত দে, বেতন দে, নইলে বুকে গুলি দে’

সিলেটে চা শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

0 0

নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেছেন চা শ্রমিকরা। তীব্র গরমের মধ্যে তাদের তপ্ত স্লোগান, ‘ভাত দে, বেতন দে, নইলে বুকে গুলি দে’।

রবিবার (৪ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরের মালনিছড়া চা বাগান এলাকায় সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেন তারা। অবরোধ চলে দুপুর তিনটা পর্যন্ত।

এ সময় বিমানবন্দর সড়কের দুপাশে দীর্ঘ সারিতে যানবাহন আটকা পরে। দুর্ভোগে পড়েন গন্তব্যগামী যাত্রীরা। পরে দুপুর ৩টার দিকে প্রশাসনের আশ্বাসের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন তারা।

জানা যায়, সিলেটের বুরজান টি কম্পানির অধীন তিনটি চা বাগান- বুরজান, ছড়াগাঙ, কালাগুল বাগান ও বুরজান কারখানার প্রায় ২ হাজার ৬০০ শ্রমিক ২০ সপ্তাহ ধরে বেতন পাচ্ছেন না।

২০ সপ্তাহের বকেয়া বেতন পরিশোধসহ ১২ দফা দাবিতে বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন চা শ্রমিকরা। দুই দিন আগেই তারা এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন।
আন্দোলনে আসা চা শ্রমিকদের একজন মধ্য চল্লিশের উষা কুর্মী। তিনি বলেন, ‘আমাদের বকেয়া বেতন রয়েছে ২০ সপ্তাহের।

বোনাস, বাড়তি টাকা, রেশন নাই, ঘর নাই, বাড়ি নাই, চিকিৎসা নাই। ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমরা অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। দুইটি বছর দরে আমাদের খুব কষ্টে যাচ্ছে। দাবিদাওয়া জানিয়েও কিছু পাচ্ছি না।’
একবেলা খেলে আরেকবার খাওয়া পান না জানিয়ে তিনি বললেন, ‘সাহেব ভাগি গেছে, বাবুও ভাগি গেছে।

এখন আমরা মাটি বইয়া (বহন করে), পাথর বইয়া (বহন করে) কোনোমতে সন্তানের মুখে খাবার দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
ষাট বছরের বৈশাখি বুনার্জীও এসেছিলেন আন্দোলনে অংশ নিতে। তিনি বলেন, ‘এতদিন ধরে আমাদের বেতন বন্ধ, রেশন বন্ধ। আমাদের মালিক আমাদের খোঁজও নেয় না। আমরা কীভাবে চলি জানার চেষ্টাও করে না। এবার নিয়ে আমরা তিনবার মিছিলে আইলাম, কিন্তু লাভ হয় না। বৃষ্টিতে আমাদের ঘর বাড়ি যে ভাংছিল নিজেরা যতটা পারি ঠিক করেছি। কিন্তু তবু আমাদের কষ্ট হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা বাধ্য হয়ে ধোপাগুলে যায় পাথর ভাঙতে। অনেক কষ্টের কাজ, তবু যেতে হয়। আমরা না খেয়ে আছি-মালিকপক্ষের কি একটু দয়া লাগে না।’

বিষু বাড়ৈ নামে আরেক নারী চা শ্রমিক বলেন, ‘বাচ্চারা ভুকে (ক্ষুধার্ত) আছে, আমরাও ভুকে থাকি। সাহেব, বাবু বাগানে নাই। আমাদের দাবি, আমাদের বেতন, রেশন, বোনাস যদি ক্লিয়ার করে দেয় তাহলে আমরা কাজে ফিরে যাবো। এরিয়ারসহ সব বাকি রয়েছে। আমরা উপাস-কাপাস জীবন কাটাই।’

অবরোধ চলাকালে চা শ্রমিক নেতা অজিত রায় বলেন, ‘৫ মাস যাবত আমাদের বেতন বন্ধ, রেশন বন্ধ। আমাদের একটাই কথা, আমাদের সমস্যা সমাধান করতে হবে। অন্যথায় আমরা রাস্তা ছাড়ব না। আপনারা আমাদেরকে রাস্তায় নামিয়েছেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে জানিয়ে আসছি আমাদের সমস্যাগুলো। কেউ গুরুত্ব দেয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা আমাদের নির্দিষ্ট করে লিখিত আকারে জানান কবে আপনারা এ সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।’

পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ-সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আসেন সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনূর রুবাইয়্যাৎ। এসময় আন্দোলনকারীরা লিখিত প্রতিশ্রুতি চান তাদের কাছে। তখন এক সেনা কর্মকর্তাকে তাদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আমি দাঁড়াবো, জানিয়েছি। আপনারা কেন রাস্তা বøক করলেন। আপনারা কি দাপ্তরিক কার্যক্রম বুঝেন? ইউএনও মহোদয় আসছেন, আশ্বাস দিয়েছেন। বিষয়টি সমাধান করবেন।’

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনূর রুবাইয়্যাৎ এসময় চা শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা আপনাদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের বকেয়া বেতনসহ যা দাবি আছে, আপনাদের যে সমস্যাগুলো আছে তা যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে দূর হয় তার জন্য আমরা কাজ করছি।’

লিখিত আকারে দেওয়ার দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা অনেকদিন ধৈর্য ধারণ করেছেন। আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী আজকেই আমরা লিখিতভাবে জানাব যে কবে আমরা এ সমস্যা সমাধান করতে পারব।’

রাস্তায় লিখিত দেওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের ৫ জন প্রতিনিধি পঞ্চায়েতসহ আমার অফিসে আসেন। আমরা লিখিতভাবে জানাবো।’ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে আশ্বাস দেন তিনি। পরে লিখিত আশ্বাসে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.