রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আরও চার শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- এরিকসন (১৩), আরিয়ান (১৩), নাজিয়া (১৩) ও সায়ান ইউসুফ (১৪)।
সোমবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান।
মর্মান্তিক এ বিমান দুর্ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৭ জনে।
যদিও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ২০। এছাড়া পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় আটজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার রাত দেড়টার দিকে এ তথ্য জানায় আইএসপিআর।
এর আগে রাত ৮টার দিকে আইএসপিআরের দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২০। আহত ১৭১ জন। তারা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আহত ও নিহতের সংখ্যাও জানায় আইএসপিআর।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়—
১. কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল: আহত ৮ জন, নিহত নেই
২. জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট: আহত ৭০ জন, নিহত ২
৩. ঢাকা মেডিকেল: আহত: ৩, নিহত ১
৪. সিএমএইচ-ঢাকা: আহত ১৭, নিহত ১২
৫. কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটাল: আহত ১, নিহত ২
৬. লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টার, উত্তরা: আহত ১১, নিহত ২
৭. উত্তরা আধুনিক হসপিটাল: আহত ৬০, নিহত ১
৮. উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল: আহত: ১, নিহত নেই।
রাত ৮টার দিকে দেওয়া আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নিহতের সংখ্যা ‘দুই’ উল্লেখ করা হয়। যদিও পরবর্তীতে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও সাতজনের মৃত্যুর কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, সেখানে চিকিৎসাধীন মাহেরীন চৌধুরী (৪০) ও আফনান (১৪) মারা গেছেন। রাত দেড়টার দিকে ডা. শাওন বিন রহমান জানান, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ আব্দুল্লাহ সামিনও (১৪) মারা গেছেন। তিনি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। অর্থাৎ রাত দেড়টার দিকে আইএসপিআরের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের মৃত্যুর সর্বশেষ তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
রাত সোয়া ৩টার দিকে ডা. শাওন বিন রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আরও চার শিক্ষার্থী মারা গেছেন। এর মধ্যে এরিকসনের শরীরের ১০০ শতাংশ, আরিয়ানের ৮৫ শতাংশ, নাজিয়ার ৯০ শতাংশ এবং সায়ান ইউসুফের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। বর্তমানে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও আইসিইউতে ৪২ জন চিকিৎসাধীন আছেন।’
প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুলপর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল বলে জানা যায়। যাদের বেশিরভাগই হতাহত হন।
দুর্ঘটনার পরপর উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। উত্তরাসহ আশপাশের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের উদ্ধারকাজ শুরু হয়। পরে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় বিজিবি ও সেনাবাহিনী। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় শোক জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।